হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এখনো কাতরাচ্ছেন দগ্ধরা। সবার মনেই স্বজন হারানোর চাপা কষ্ট। প্রতিটি দগ্ধ রোগীকে ঘিরে হাজারও মানবিক প্রেম, পরোপকার আর নিঃস্বার্থ ত্যাগের গল্প। অন্যদিকে, মানবিকতার স্বর্গীয় সৌন্দর্য দিয়ে দগ্ধদের দুঃখ ভোলানোর প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
গুরুতর দগ্ধ রাশেদ সর্দার। বিছানায় শুয়ে থাকা রাশেদকে সকালের দাঁত ব্রাশ থেকে শুরু করে খাইয়ে দেয়া, সব কাজই করছেন তার ফুপা। তরতাজা যুবকের জীবনে হঠাৎই অসহায়ত্বের এই ছাপ। তবে সে দুঃখ ভোলাতে তার স্বজনদের চেষ্টা অন্যদের কাছে চোখে জল আনে। রাশেদ কোনমতে বাঁচলেও সেই রাতে সাথে থাকা দুজনকে হারিয়েছেন।
আহত রাশেদ সর্দার বলেন, আমি হাসপাতালে আসার পর থেকে আমার খালু আমার সাথে আছে। আমার মা ও ছোট ভাই এখনও অসুস্থ।
মো. শামীম ফুপা বলেন, এ দুর্ঘটনার খবর শুনে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। সেখানে মাকে একটি চড়ে খুঁজে পাইছি, অন্য এক চড়ে পাই আহত রাশেদ সর্দারের ভাইকে।
দম ফেলার ফুসরত নেই মোস্তফা জামানের। ওই রাতের ঘটনায় হারিয়েছেন মাকে। দগ্ধ ছোট্ট বোন এবং বাবাকে একাই সামলাচ্ছেন দুই হাতে। বোন, বাবাকে সুস্থ করার যেন যুদ্ধে নেমেছেন মোস্তফা।
আহত আমেনা বলেন, আমার ভাই আমাকে পাশে রেখেছে। আমার অনেক সেবা যত্ন করছে। বড় ভাই মোস্তফা জানান, আহত আমেনা আমার ছোট বোন। ওর পাশে দাঁড়ানোর মতো আর কেউ নাই।
অগ্নিদগ্ধ কালু হারিয়েছেন মমতাময়ী মা, আদরের ফুটফুটে সন্তানসহ পরিবারের ৫ জনকে। আর তাকে মাতৃসেবা দিয়ে সারিয়ে তোলার চেষ্টায় বড় ভাবি রুনা বেগম।
স্বামী জহিরুল ইসলাম লঞ্চ দুর্ঘটনায় আহত, এমন খবর পেয়ে সন্তানকে রেখেই ছুটে এসেছেন জাকিয়া বেগম। সারাদিন স্বামীর সেবা করেই দিন কাটে তার।
এক হাজার বেডের হাসপাতালে রোগী থাকে গড়ে এক হাজার ৮০০। অর্ধেক লোকবল। তাই বলে এই বিপদগ্রস্ত মানুষদের সেবা দিতে কুণ্ঠাবোধ করেনি স্বাস্থ্য কর্মীরাও।
চক্ষু বিভাগের সিনিয়র নার্স মাহিনুর আক্তার শিউলী বলেন, অনেকের স্বজন নেই। দেখা গেছে অন্য রোগীর স্বজনরা সেবা করছে। এতে রোগীরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছে এবং রোগীর স্বজনরা আমাদেরও অনেক সহযোগীতা করছেন।
চারপাশে যখন অনেক স্বার্থপরতা, বিভেদ বিদ্বেষ আর বিপদে পড়াদের আহাজারি, তখন ভালোবাসার এ গল্পও দেখা গেছে এখানে। এমন কঠিন সময়ে মানুষ যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবোধের চরম বিকাশ আর স্বার্থপরতার যুগে তা সত্যির আশাজাগানিয়া।