1. doorbin24bd@gmail.com : admin2020 :
  2. reduanulhoque11@gmail.com : Reduanul Hoque : Reduanul Hoque
April 26, 2024, 8:09 pm

ক্রিকেটকে এগিয়ে নেবার দায়িত্ব সবার

  • প্রকাশিত : শনিবার, নভেম্বর ২০, ২০২১
  • 180 বার পঠিত

অঘোর মন্ডল : এ দেশের মানুষ যতটা ক্রিকেটপ্রেমী, এর চেয়ে বেশি ক্রিকেট মৌলবাদী। মাঠে অন্যদের টেক্কা দিতে না পারলেও ক্রিকেটীয় উগ্রতায় চ্যাম্পিয়নশিপের অন্যতম দাবিদার। তাদের ক্রিকেটে একটাই মতবাদ। জয়। জিততে না পারলে তুমি ব্যর্থ। আর ওই ব্যর্থ লোকদের ওপর প্রতিশোধ নিতে তাকে ছুড়ে ফেল! তার চৌদ্দ পুরুষ উদ্ধার করো! দুঃখজনক সত্য হচ্ছে, ক্রিকেটীয় সেই মৌলবাদী চিন্তা সাধারণ মানুষ থেকে ক্রিকেটকর্তা সবার মধ্যে। গণমাধ্যম থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সব জায়গায়!

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ একটা ম্যাচও জিততে পারেনি। একটা ম্যাচও বলার কারণও একটা। মূল পর্ব তো ‘সুপার টুয়েলভ’ থেকে। সেখানে জয়হীন বাংলাদেশ। সেই ব্যর্থতার কারণ খুঁজতে দুই সদস্যের এক কমিটি গঠন হয়েছে। তারা কোনো প্রতিবেদন দেওয়ার আগেই গোটা দলের খোলনচলে পাল্টে ফেলার উদ্যোগ। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে হাফ ডজন ত্রিকেটারকে বাদ দিয়ে দল গঠন করা হলো। দলের সঙ্গে যোগ করে দেওয়া হয়েছে ‘টিম ডিরেক্টর’ নামে বোর্ডের এক পরিচালককে! তার কাজের পরিধি কী, তা কেউ জানেন না। তার আগে আর একটা প্রশ্নের উত্তর নেই। এই নিয়োগ দিলেন কে বা কারা? বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নতুন কমিটির কোনো সভা হয়নি। কোনো আলাপ-আলোচনা ছাড়াই টিম ডিরেক্টের নিয়োগ! তা হলে বোর্ড পরিচালকদের ক্ষমতার দৌড় কতটুকু, তাও বোঝা গেল! সাধারণ কাউন্সিলর আর পরিচালকদের মধ্যে আসলে কোনো তফাত নেই! আসলে বেশিরভাগ পরিচালকই ‘বোর্ডের অলঙ্কার’! সংখ্যাতত্ত্বে ২৫ জন পরিচালক লাগে। তাই কয়েকজনকে রাখা।

আসলে এই সংখ্যাতত্ত্ব মেনেও সব কিছু হয় না। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খারাপ খেলার কারণ খুঁজতে দুই সদস্যের কমিটিÑ এটা কেমন! দুজনের চোখে খারাপ খেলার কারণ যদি দুই রকম ধরা পড়ে, তা হলে বোর্ড কারটা গ্রহণ করবে? নাকি কারণ যাই হোক, দুজনকে একমত হয়েই একটা প্রতিবেদন দিতে হবে! কেন খারাপ খেলল, সেই কারণ খোঁজার কমিটি গঠনেই গলদ! হতে পারত বিসিবির বাইরে থেকে নিরপক্ষে একজনকে নিয়ে এক সদস্যের কমিটি। হতে পারত বিসিবি এবং বিসিবির বাইরের সদস্য মিলিয়ে তিন বা পাঁচ সদস্যের কমিটি। আসলে দল কেন খারাপ খেলল, তার সঠিক কারণ খুঁজতে চাওয়া হয়েছে কিনা প্রশ্ন সেখানে।

বিশ্বকাপের পর পরই পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে নামছে বাংলাদেশ। কোনো সন্দেহ নেই, দারুণ শক্তিশালী দল নিয়ে ঢাকায় এসেছে পাকিস্তান। কঠিন এক পরীক্ষার মুখে পড়বে বাংলাদেশ। ঢাকার মাঠে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের চেয়েও শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হবে পাকিস্তান। তা আপনি কিউরেটরকে যে উইকেট বানানোর প্রেসক্রিপশনই দিন না কেন। পাকিস্তান বিপজ্জনক। সে রকম একটা সিরিজের জন্য দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের ছেঁটে ফেলা কতটা যুক্তিসঙ্গত, তার উত্তর স্কোর কার্ডে পাওয়া যাবে। কিন্তু দল ঘোষণার আগে নিরবাচক-কোচ-টিম ডিরেক্টরদের মধ্যে আলোচনার যে চিত্র বিভিন্ন টেলিভিশনের ক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়েছে, তাতে পারিষ্কারÑ দল ঘোষণার আগেই দল নিয়ে বেসুর একটা রিংটোন বাজতে শুরু করেছে! কাকে কী কারণে দলে নেওয়া হলো, তার খুব যুক্তিসঙ্গত ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যা নির্বাচকদের কাছে নেই! আসলে সিলেকশন কমিটির সভায় স্ট্যান্স নেওয়ার পর তারা নিজেরাও যেন নিজেদের অফস্ট্যাম্প কোথায়, সেটি খুঁজে পাননি! নিজেরাও জোর দিয়ে বলতে পারেন নাÑ হ্যাঁ, অমুক ক্রিকেটারকে আমরা মনে করেছি প্রতিভাবান। দেশকে সার্ভিস দেওয়ার ক্ষমতা আছে। তাই তাকে দলে নিয়েছি কিংবা অমুক ক্রিকেটার ঠিক ফর্মে নেই। তাই তাকে দলের বাইরে রেখেছি। সেই ক্রিকেটারের নাম যাই হোক।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল খারাপ খেলেছে, নাকি অন্য দলগুলো আমাদের চেয়ে ভালো খেলেছেÑ সেই হিসাবটাও মেলানো দরকার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কোন আসরে বাংলাদেশ ভালো খেলেছিল! অতীতে যাদের সাফল্য বলতে চৌদ্দ বছর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটা জয়, তারা নতুন করে আর কী খারাপ খেলল! বরং এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রাপ্তিযোগ হচ্ছে, আগামী বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার জন্য তাদের আর ওয়েটিং লিস্টে থাকতে হবে না। কারণ ওয়েস্ট ইন্ডিজ খারাপ করায় আগামীবার বাংলাদেশ সরাসরি সুপার টুয়েলভ খেলবে। খারাপ খেলার কারণ খুঁজতে কমিটি করলে উইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডেরই করা উচিত!

যে জন্য ব্যর্থতার কারণ খুঁজতে কমিটি গঠন, সেই কমিটি কোনো প্রতিবেদন দেওয়ার আগেই বোর্ড একটা কারণ খুঁজে পেয়েছে। দলের হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো ঠিকঠাক দল চালাতে পারছেন না! তাই দলের সঙ্গে একজন টিম ডিরেক্টর যোগ করে দেওয়া হয়েছে! তিনি নেট প্র্যাকটিস থেকে দলের একাদশ নির্বাচনÑ সব জায়গায় ভূমিকা রাখবেন। তা হলে হেড কোচের ভূমিকা কী হবে? পাকিস্তানের বিপক্ষে দল ভালো খেললে বলা হবে, টিম ডিরেক্টরের ছোঁয়ায় দল বদলে গেছে। কিন্তু খারাপ খেললে কি তিনি দায় নেবেন? নাকি ‘বলির পাঁঠা’ সেই ক্রিকেটাররাই হবেন?

আসলে এ দেশের মানুষের ক্রিকেটীয় উগ্র চিন্তার প্রকাশ সব জায়গায়। তারা জয়ের বিপরীতে অন্যকিছু দেখতে পান না! সেটি ঘরোয়া ক্রিকেট হোক আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হোক। হ্যাঁ, পরাজয়কে ঘৃণা করতে না শিখলে জয় পাওয়া যায় না। তবে জয়ের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হয়। সেই প্রস্তুতিতেই ঘাটতি। বিসিবি নির্বাচনের আগে কাউন্সিলর বুকিং দিতে ঘরোয়া ক্রিকেটে এক একটা ক্লাব ম্যাচে কীভাবে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করা হয়, তা নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে। সেই পুরনো ক্রিকেট পাঁচালি নতুন করে বলার দরকার নেই। পেশাদার যুগে পেশাদারিত্বের উৎকর্ষ বাড়ে সংস্কারের মধ্য দিয়ে। এ দেশের ক্রিকেটে অনেক কিছুরই সংস্কার দরকার। সেই জায়গাটায় কেউ হাত দিতে চান না। গত কয়েক বছরে হাত দেওয়া হয়নি। শুধু ক্রিকেটাররা একটা দেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে পারে না। আধুনিক যুগে অনেক কিছুর দরকার পড়ে।

ক্রিকেট একাডেমিতে কোচ তৈরির জন্য কি পঠন-পাঠন হচ্ছে? ঘরোয়া ক্রিকেটে একজন লোক তিন-চারটা ক্লাবের কোচের দায়িত্ব পালন করছেন! বিশ্ব ক্রিকেটে এমন নজির খুঁজে পাওয়া দায়! আসলে ক্রিকেটে আর পাঁচটা জিনিসের মতো কোচিং একটা সংস্কৃতি দাবি করে। সেটি তৈরি হয়নি বাংলাদেশে। অথচ বিদেশ থেকে একের পর এক কোচ আমদানি করা হয়। লাখ লাখ ডলার গুনে দেওয়া হয়। আবার দল হারলে তাদের খুব বাজেভাবে বিদায় করা হয়! রাসেল ডমিঙ্গো পারছেন নাÑ এটা যদি উপলব্ধি হয়, তা হলে টিম ডিরেক্টরকে পুরো দায়িত্ব দিন দলের। প্রয়োজনে ডমিঙ্গোকে বেতনসহ ছুটিতে রাখেন। দেখুন, আপনার টিম ডিরেক্টর কী পারেন। তা না হলে এই দেশি-বিদেশি দ্বন্দ্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে আরেকটা ভরাডুবি হলে দায়টা আবার চাপানো হবে ক্রিকেটারদের কাঁধে।

আধুনিক ক্রিকেটে কোচকে জুতা সেলাই থেকে চøীপাঠÑ সব হয়তো করতে হয় না। কিন্তু জেনে রাখতে হয়। সাবেকরা কোচিং করান তাদের খেলাজীবনের অভিজ্ঞতা আর অনুভূতির ওপর নির্ভর করে। কিন্তু মনোবিজ্ঞান, শারীরিক বিজ্ঞান, ক্রিকেট বিজ্ঞান জানা না থাকলে সফল হওয়া কঠিন। উন্নত ক্রিকেট আইডিয়া এখন ডলার দিয়ে কিনতে হয়। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মতো উন্নত দেশগুলোও নাগরিকত্ব ছাপিয়ে পেশাদারিত্বকে গুরুত্ব দিতে ডলার খরচ করে। সেটি ‘ট্রান্সফার অব ইনফরমেশন’-এর জন্য। পাকিস্তান ক্রিকেট বিশ্বে প্রায় ব্রাত্য হয়ে পড়া দলটাও বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়া থেকে ম্যাথু হেইডেনকে ব্যাটিং পরমার্শক হিসেবে নিয়ে এলো। ফলটাও দেখা গেল। সেই পাকিস্তানের বিপক্ষে আমরা সিরিজ খেলার আগে উপলব্ধি করলাম দলের ভেতর একজন দেশি টিম ডিরেক্টর লাগবে!

এ বিশ্বকাপটা যারা জিতল, সেই অস্ট্রেলিয়া দলটাকে বাংলাদেশ নিজের মাটিতে বলে-কয়ে হারিয়েছিল। তাতে অনেকে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছিলেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া কী করল? তার কোচ বা অধিনায়কের ওপর থেকে কি আস্থা হারিয়েছিল? বরং ফর্মহীন ডেভিড ওয়ার্নারকে দেখেও তারা ভাবেননি তার ক্রিকেট সূর্য পশ্চিম দিগন্তে ঢলে পড়তে শুরু করেছে! অন্যরা যাই মনে করুক, তাদের টিম ম্যানেজমেন্ট ভাবেনি। তাই অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক বলতে পেরেছেলিন, ‘ডেভিডকে নিয়ে ভাবনার কিছু নেই। বিশ্বকাপে ঠিকই ওর সেরাটা পাব।’ আর বিশ্বকাপ জেতার পর অস্ট্রেলিয়ান কোচ বলেছেন, ‘ডেভিডের সেরাটা তখনই পাওয়া যায় যখন পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায়।’ বিশ্বকাপের ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের নামও ডেভিড ওয়ার্নার।

বিশ্বকাপ অনেক কিছু মনে করিয়ে দিল, অনেক কিছু শেখাল। বাংলাদেশের ক্রিকেটার এবং আমরা কী শিখলাম জানি না! যদি কিছু শিখে থাকি, তা হলে তার প্রয়োগ পাকিস্তান সিরিজে দেখতে পাব। তবে একটা জিনিস সব সময় বিশ্বাস করি। ক্রিকেট জীবনের মতোই এক মহাসমুদ্র। যা নেয়, তা ফিরিয়েও দেয়। আবার উল্টো যা দেয়, তাও ফিরিয়ে নেয়। তাই ক্রিকেট মৌলবাদীদের মতো জয় ছাড়া অন্য কিছু মানা যাবে না এই তত্ত্বে বিশ্বাস রেখে ক্রিকেটারদের ওপর থেকে রাতারাতি আস্থা হারানো ক্রিকেট চেতনার পরিপন্থী। বিশ্বকাপ অনতি অতীত। সময় সেখানেই থমকে আছে বা থাকবে, তা নয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ বাংলাদেশকে দাঁড় করাবে নতুন এক পরীক্ষার মুখোমুখি। সেখানে হারলেও সেই হারের মাঝে যেন ক্রিকেটীয় গরিমাটা বিসর্জন না যায়।

অঘোর মন্ডল : সিনিয়র জার্নালিস্ট ও কলাম লেখক

সংবাদটি শেয়ার করুন :
এ জাতীয় আরও খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
© All rights reserved © 2017 doorbin24.Com
Theme Customized By Shakil IT Park